একুয়াপনিক কিঃ
একুয়াপনিক শব্দটি আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত না হলেও একুয়ারিয়াম শব্দটি সবারই জানা এবং পছন্দের। একুয়ারিয়ামে যেটা করা হয় তা হল একুয়াকালচার। একুয়াকালচার বা একুয়ারিয়ামের এই মাছের সাথে প্রকৃতির আরেক অমূল্য দান গাছকে যোগ করলেই হয়ে যায় একুয়াপনিক। গাছ থাকলেও এখানে কোন মাটি নেই। মাটি ছাড়া গাছ চাষের পদ্ধতির নাম হাইড্রপনিক। একুয়াকালচার ও হাইড্রপনিক এর মিশ্রণে উন্নত আরেক নতুন প্রযুক্তির নাম হচ্ছে একুয়াপনিক। একুয়াপনিক এর একুয়া শব্দের অর্থ পানি। আর পনিক এসেছে গ্রিক পোনোস শব্দ থেকে যার অর্থ কাজ বা পরিশ্রম। আসলে এই পোনোস হচ্ছে গ্রিকদের কঠোর পরিশ্রমের দেবতার নাম। শাব্দিক দিক থেকে একুয়াপনিক হচ্ছে পানির সাথে পরিশ্রমের এক অসাধারন সাফল্য। একদিকে পানিতে মাছ অন্যদিকে গাছ একসাথেই বেড়ে ওঠে। দুজন দুজনকে বাঁচিয়ে রাখে, বড় করে। গাছ ও মাছের সাথে এই সম্পর্ককে শক্ত করে জুড়ে দেয় প্রকৃতির আরেক ক্ষুদে বন্ধু ব্যক্টেরিয়া। একুয়াপনিক শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই তৈরী হয়ে ওঠে একটি জীবন চক্র যা চলতে থাকে অনেকটাই নিজের মত করে। ভাল একটি চক্র একবার তৈরী হলে পরিশ্রমের দিন শেষ। গাছ, মাছ আর অনুজীবের এই বেড়ে ওঠার চক্রকেই বলে একুয়াপনিক। যা আপনার প্রতিদিনের বিষমুক্ত সতেজ শাকসবজি আর মাছের চাহিদা পূরণ করবে খুব সহজে। বিষটা খুবই সহজ আবার একটু জটিলও তবে সহজ করে নিলে আপনার বড়ীতে নিজেই পারবেন বিষমুক্ত সতেজ শাকসবজি আর মাছ উৎপাদন করতে।

চিত্রঃ একুয়াপনিক সিস্টেম এর ধারনা
এবার একটু কঠিন করে বললে, একুয়াপনিক হচ্ছে পানির পুনঃপুন ব্যবহার করে একুয়াকালচার এবং মাটি ছাড়া সবজি চাষের হাইড্রপনিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে তৈরী একটিমাত্র সমন্বিত ব্যবস্থায় বিষমুক্ত সতেজ শাকসবজি আর মাছ উৎপাদন করা। একুয়াপনিক ব্যবস্থায় থাকে একটি মাছের পাত্র যার নাম “ফিস ট্যাঙ্ক” ও একটি গাছের পাত্র যার নাম “গ্রো বেড”। “ফিস ট্যাঙ্ক” এ মাছ উৎপাদন হয় আর “গ্রো বেড” এ উৎপাদন হয় সবজি। “ফিস ট্যাঙ্ক” এ মাছকে নিয়মিত যে খাবার দেয়া হয় মাছ তা খেয়ে যে বর্জ্য বা মল-মূত্র তৈরী করে তা একটি পাম্পের সাহায্যে পানির সাথে “গ্রো বেড” বা গাছের পাত্রে দেয়া হয়। যা ক্ষুদে বন্ধু ব্যক্টেরিয়ার উপস্থিতিতে গাছের জন্য খাদ্যে পরিণত হয়। গাছ পানি থেকে খাবার গ্রহণের পর পরিষ্কার পরিশোধিত পানি আবার মাছের পাত্র বা “ফিস ট্যাঙ্ক” এ এসে জমা হয়। এই চক্র সারাদিন চলতেই থাকে। এর সাথে সাথে অল্প জায়গায় আনেক বেশি মাছের জন্য আরেকটি পাম্পের সাহায্যে দেয়া হয় বাড়তি অক্সিজেন বা বাতাস। ফলে মাছ সবসময় অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিষ্কার পরিশোধিত পানি পায় যা উচ্চ মানসম্পন্ন্য মাছ উৎপাদনে সহায়ক। উল্লেক্ষ্য পুরো প্রক্রিয়ায় কোথাও কোন প্রকার রাসায়নিক সার কিনতে হয় না এবং বিষাক্ত বালাইনাশক এর ব্যবহার নাই ফলে উৎপাদিত পণ্য বিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব।
একুয়াপনিক এর সুবিধাঃ
১। একই সাথে বিষমুক্ত সতেজ শাকসবজি ও উচ্চ মানসম্পন্ন্য মাছ উৎপাদন করা যায়।
২। মাটির ব্যবহার না থাকায় মটিবাহিত রোগ-জীবানু মুক্ত ও সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
৩। গাছের জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক সার কিনতে হয় না এবং বিষাক্ত বালাইনাশক এর ব্যবহার নাই ফলে উৎপাদিত পণ্য বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
৪। আগাছা বাছাইয়ের কোন ঝামেলা নাই।
৫। অল্প জায়গায় সারা বছর অধিক ফলন পাওয়া যায়
৬। যেকোন সময় যেকোন স্থানে স্থাপন করা ও সরান যায়।
৭। শ্রমিক খরচ খুবই কম এমনকি পারিবারিক চাহিদা মেটাতে বাড়তি কোন শ্রমিকের প্রয়োজন নাই।
৮। পানির ব্যবহার ৯০% কম।
৯। গতানুগতিক কাদামটির কৃষির পরিবর্তে স্মার্ট ও আধুনিকতার ছোয়ায় শিক্ষিত সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
একুয়াপনিক এর অসুবিধাঃ
১। প্রথমিক খরচ বেশী এবং সিস্টেম তৈরী করতে দক্ষ্য জনবলের অভাব।
২। সবজি, মাছ ও ব্যক্টেরিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনিয় প্রশিক্ষনের অভাব।
৩। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ, ভাল মানের বীজ ও মাছের পোনা ব্যবস্থা করা কঠিন।
৪। প্রতিদিন ও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।
৫। শতভাগ সাফল্যের জন্য পরিবেশ তথা তাপমাত্রা, আলো, বাতাস, পানি, আদ্রতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইটে যোগ দিন। আপনি আমি মিলে আরো আনেক ভাল কিছু করতে পারব।
আপনার মতামত দিন। আপনার মতামত আমদেরকে আরো ভাল কিছু করতে সাহায্য করবে।
ভাই আমি অনলাইনে গাটাগাটি করে একোয়াপনিক সমন্ধে প্রথমিক কিছু ধারানা পেয়েছি ।আমি এই প্রজেক্টটা আমার বাড়ীতে করতে চাই । দয়া করে যদি আমাকে কিছু পরামর্শ দিতেন তাহলে আমি উপকৃত হতাম। আমার নাম – মোঃ জালালউদ্দিন, নরসিংদী সদর, নরসিংদী । ফোন – 01720683433।